




দিনমজুরদের জীবন তাদের সারাদিনের কাজ আর মজুরির উপর নির্ভর করে। যেদিন তারা কাজ করতে পারেন সেদিন তাদের ঘরে উনুন জ্বলে, যেদিন পারেন না সেদিন তাদের অভুক্তই থাকতে হয়। কিন্তু যদি আদিবাসী দিনমজুরদের কথা বলা হয় তাদের অবস্থা তো আরও খারাপ। কেরলের বায়নাড এরকম এক আদিবাসী এলাকা। এখানকার মানুষদের পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার সময় নেই। এখানকার বাচ্চারাও সেই ভাবে স্কুলমুখী নয়। বেশিরভাগ বাচ্চাই ছোটো থেকে বাবা মায়ের সাথে মজুরিতে লেগে যায়।





কিন্তু এখানকারই এক মজুরের মেয়ে আইএএস অফিসার হয়ে আদিবাসী সমাজের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সেই আইএএস অফিসার এর নাম শ্রীধন্যা সুরেশ। তার বাবা মনরেগাতে দিনমজুরের কাজ করতেন। এমনকি তিনি গ্রামের বাইরে বাজারে তীর ধনুকও বিক্রি করতেন। তাদের জীবন দারিদ্রতা পূর্ণ ছিল। এমনকি গ্রামে একটা স্কুলও ছিল না। এত অসুবিধার সম্মুখীন হয়েও শুধুমাত্র আদিবাসী সমাজের উন্নয়ন করতে ও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি আইএএস অফিসার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
শ্রীধন্যার পরিবারে তিনি ছাড়াও আরো তিন ভাই বোন রয়েছে।





তার বাবা দিনমজুরি করে যে উপার্জন হয় তার ওপরই তাদের পুরো পরিবারের ভরণপোষণ চলে। শ্রীধন্যার বাবা জানান তাদের অনেক সংঘর্ষ করে জীবন যাপন করতে হলেও তারা কোনদিন সন্তানদের পড়াশোনার সাথে আপোষ করেননি। এমন প্রতিকূল অবস্থাতেও শ্রীধন্যা কোঝিকোড যায় এবং সেখানকার সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে জুওলজি তে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি কিছু সময় বায়নাডের আদিবাসী হোস্টেলে ওয়ার্ডেনেরও কাজ করেন।





তিনি যখনই কোনো আইএএস অফিসারকে দেখতেন তারও আই এ এস অফিসার হওয়ার ইচ্ছা মনে জাগত। এরপর তিনি সিভিল সার্ভিসের সাথে জড়িত সব খবর সংগ্রহ করেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য শ্রীধন্যা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার দ্বারা পরিচালিত সিভিল সেবা প্রশিক্ষণ সেন্টারে ভর্তি হন। সেখান থেকে কোচিং নেওয়ার পর তিনি তিরুবন্তপুরম চলে যান। তিরুবন্তপুরেম গিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনুসুচিত জনজাতি বিভাগ তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে। 2018 সালে শ্রীধরা সিভিল সার্ভিসের মেন পরীক্ষায় সফলতা পান। এরপর তাকে ইন্টারভিউ এর জন্য দিল্লি যেতে হয়।





কিন্তু তার কাছে দিল্লি যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তার বন্ধুরা 40 হাজার টাকা চাঁদা তুলে তাকে সাহায্য করেন। এরপর তিনি দিল্লি গিয়ে ইন্টারভিউ দেন এবং 410 তম রেঙ্ক পেয়ে পাশ করেন। যখন তিনি এই খবর জানতে পারেন সবার প্রথমে তিনি তার মাকে ফোন করে জানান। কিছুসময়ের মধ্যেই মিডিয়া থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য সাংবাদিকরা তার বাড়ি পৌঁছে যায়। শ্রীধন্যা জানান সেই মুহূর্তে তাদের বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু সেই বাড়িতেই মিডিয়ার লোকেরা তাদের পুরো পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয়। শ্রীধন্যাকে শুভকামনা জানাতে কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তার বাড়ি যায় এবং রাহুল গান্ধী টুইট করে তাকে শুভকামনা জানান।শ্রীধন্যা তাদের উপজাতির প্রথম আইএএস অফিসার।।




