




আশা করা যায়, সকলেই বিকানেরওয়ালা ভুজিয়ার নাম শুনেছেন। তবে এর পিছনের গল্পটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আজ আমরা আপনাদেরকে বিশ্ব বিখ্যাত বিকানেরওয়ালা সংস্থা এবং এর মালিক ‘লালা কেদারনাথ আগরওয়াল’ ওরফে ‘কাকা জি’ সম্পর্কে বলবো। আপনি কি জানেন, শুরুতে বিকানেরওয়ালা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়ে বালতি করে রসগোল্লা এবং নোনতা বিক্রি করতেন। এত বড় ব্র্যান্ড তৈরিতে যার হাত রয়েছে, তিনি হলেন লালা কেদারনাথ আগরওয়াল এবং তার পরিবার।





1955 সালে, কেদারনাথ আগরওয়াল অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁর বড় ভাইকে নিয়ে বিকানার থেকে দিল্লিতে চলে যান। সেখানে যাওয়ার পরে, তিনি যে এত বিখ্যাত হয়ে উঠবেন এবং তার নাম পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এ কথা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তবে তার যাত্রা এতটা সহজ ছিল না। কেদারনাথ আগরওয়াল যখন দিল্লিতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে তার থাকার জন্য কোনও জায়গা ছিল না। তাই তিনি বহুদিন ধর্মশালায় ছিলেন।





যখন উপার্জনের কোনও উপায় খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন তিনি বালতি করে রসগোল্লা এবং নোনতা বিক্রি করা শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে লোকেরা তাদের রসগোল্লা এবং নোনতা স্বাদ পছন্দ করতে শুরু করে। এর ফলে তাদের আয়ও বাড়তে শুরু করে। আয় বাড়ার সাথে সাথেই তিনি পুরানো দিল্লিতে একটি দোকান ভাড়া নেন। দোকানে যখন মিষ্টি ও নাস্তা তৈরীর জন্য কারিগরের দরকার পড়ে, তখন তিনি বিকানার থেকে কিছু লোককে ডেকে আনেন।





কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর এই ছোট্ট দোকান পুরো এলাকায় বিখ্যাত হয়ে উঠে। দিওয়ালি উপলক্ষে, তার তৈরি মুন হালওয়া, রসগোল্লা এবং নামকিনের স্বাদ লোকেদেরকে পুরোপুরি মুগ্ধ করে দিয়েছিল এবং এর ফলে তাদের আয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। দোকানে লোকের ভিড় বাড়ার সাথে সাথে, তিনি দোকানের জন্য একটি নিয়ম তৈরি করেছিলেন। সেটি হল যে, তিনি কাউকে দশটির বেশি রসগোল্লা দেবেন না।





এই পর্যন্ত তার দোকানের নাম ছিল ‘বিকানেরী ভুজিয়া ভান্ডার।’ এরপর কেদারনাথ আগরওয়ালের বড় ভাই জুগাল কিশোর পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, তিনি তার দোকানের নাম ‘বিকানেরওয়ালা ভুজিয়া ভান্ডার’ পরিবর্তন করে ‘বিকানেরওয়ালা’ নাম রাখুক। বড় ভাইয়ের এই পরামর্শটি কেদারনাথ আগারওয়াল পছন্দ করেছিলেন। এর পেছনের কারণ হল, এটি তার শহর বিকেনারকে মানুষের মধ্যে বিখ্যাত করে তুলবে।





এরপর তিনি তার দোকানের নাম পরিবর্তন করে ‘বিকানেরওয়ালা’ রেখেছিলেন। এবং কিছুদিনের মধ্যেই লোকেরা তার দোকানটিকে বিকানেরওয়ালা হিসেবে জানতে শুরু করে। কেদারনাথ আগরওয়াল 1972-73 সালের দিকে দিল্লির করোলবাগে একটি দোকান কিনেছিলেন। এরপরে তাকে আর কখনো পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে দোকানের সংখ্যা আরো বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বিকানেরওয়ালা একটি খুব বড় ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে।





এখন এই সংস্থাটির মূল্য 1000 কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে বিকানেরওয়ালা ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার পরিচালক হলেন শ্যামসুন্দর আগরওয়াল। শ্যামসুন্দর আগারওয়াল 1968 সালে যখন 16 বছরের ছিলেন তখন তিনি তার পারিবারিক ব্যবসায় যোগদান করেছিলেন। এবং মিষ্টি ও নাস্তা তৈরি করতে শিখেছিলেন। 1988 সালে বিকানেরওয়ালা সংস্থা এই ব্র্যান্ডটিকে পুরো বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাতাস পূর্ণ প্যাকেটে মিষ্টি ও নোনতা বিক্রি করা শুরু করেন।





আধুনিক যুগের পরিপ্রেক্ষিতে 2003 সালে বিকানেরওয়ালা কোম্পানি ক্যাফে খুলতে শুরু করে। এটি হলো এক ধরনের ফাস্ট ফুড সার্ভিস রেস্টুরেন্ট। হায়দ্রাবাদের বানজারা হিলসে এই সংস্থাটির দ্বারা একটি বুটিক হোটেল চালু করা হয়েছিল। আজও কেদারনাথ আগরওয়াল জি তার কাজের প্রতি অতটাই আগ্রহী আছেন। এখন তার পুরো পরিবার তাদের ‘কাকা জি’ -র এই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আজ অবধি এর মানের কোনো ঘাটতি হয়নি, তাই এটি প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে।।




