




আমরা সকলেই জানি যে জল গাছের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা। জল ছাড়া কোন গাছ বেশি দিন বাঁচতে পারে না। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন যে আমরা আজ যে উদ্ভিদ সম্পর্কে আপনাকে বলতে যাচ্ছি তাতে 40 বছর ধরে জল দেওয়া হয়নি। তবুও গাছটি খুব সহজ ভাবে বেড়ে উঠেছে। এটি কোন অলৌকিক ঘটনা নয় বিজ্ঞানের দ্বারা সম্পাদিত একটি আবিষ্কার।





আসলে বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী ডেভিড ল্যাটিমারের মনে একটি ধারণা এসেছিল যেটি তিনি নিজের প্রচেষ্টায় একটি সফল আবিষ্কারে রূপান্তরিত করেছিলেন। এটি খুব জটিল বা দীর্ঘ প্রক্রিয়া নয় তবে একটি ছোট প্রক্রিয়া যা আপনি চেষ্টা করলে বাড়িতে খুব সহজেই করতে পারেন। ছবিটি খুব মন দিয়ে দেখুন।





সুন্দর সবুজ গাছপালা যা বৃত্তাকার কাঁচের ভেতর দেখা যাচ্ছে তাদের শেষ জল দেওয়া হয়েছিল 1972 সালে অর্থাৎ 40 বছর আগে। তবে কাঁচের ভেতরের সবুজ গাছটি দেখে কেউ বলতে পারবেন না যে এটি 40 বছর ধরে জল ছাড়া স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করছে। এটি কিভাবে ঘটেছিল তা জানার আগে আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে বিজ্ঞানী ডেভিড সেটাপটি ডিজাইন করেছিলেন।





তিনি বলেছিলেন যে প্রথমে তিনি 10 গ্যালন কাচের বোতলে অর্থাৎ 80 লিটারের বোতলে একটু জল এবং কিছু সার রেখেছিলেন। তারপর সেখানে স্পাইডার নামক গাছের বীজ রেখেছিলেন। বীজ রোপণের পর তিনি বোতলটি সিল করে দেন। তারপরে 12 বছর পরে 1972 সালে তিনি বোতলের ক্যাপ টি খুলে ছিলেন এবং কিছু জল দিয়ে আবার বোতলটি সিল করে দেন। এই শেষবারের মতন বোতলটি খোলা হয়েছিল। তখন থেকে 47 বছর কেটে গেছে।





কিন্তু সেই বোতলটি আর খোলা হয়নি। তা সত্ত্বেও তখন থেকে আজ অব্দি এই গাছটি প্রায় 60 বছর ধরে বন্ধ বোতলে থেকে গেছে এবং এখনো এই গাছটি জীবিত এবং এর বৃদ্ধি হচ্ছে। এই গাছটি জল ছাড়াও যে জিনিসটির সাহায্য বেঁচে ছিল তা হল সূর্যের আলো। ডেভিট গাছটির বোতলটিকে এমন জায়গায় রেখেছিলেন যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি বোতলটি তে পড়ে। সূর্যের আলো পড়ার কারণে গাছে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া শুরু হয়।





সেই বোতলটির ভেতরে সূর্যের আলোর সাহায্যে সেই বীজ পুষ্টি পেতে শুরু করে এবং সেখান থেকে উদ্ভিদে পরিণত হয়। এইসময় বোতলটির ভেতরে অক্সিজেন এবং আর্দ্রতা তৈরি হতে শুরু করে। যেহেতু আদ্রতা তৈরি হয় তাই উদ্ভিদটি জল পেতে শুরু করে। এছাড়াও উদ্ভিদের খসে যাওয়া পাতা গুলো থেকে বোতলে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড গঠনের এই প্রক্রিয়াটিকে সেলুলার শ্বসন বলে। এইভাবে গাছগুলি বাড়তে থাকে কারণ সে সমস্ত উপাদানই পাচ্ছিল। এইভাবে বোতলের ভেতরে একটি সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র তৈরি হয়েছিল।





অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে বোতলটি নিজেই সেই উদ্ভিদের জন্য একটি পুরো পৃথিবীতে পরিণত হয়েছিল যেখান থেকে সে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিস পাচ্ছিল এবং সেই কারণেই গাছগুলি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাড়তে থাকে। ডেভিড যে প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করেছিলেন এই প্রক্রিয়া দ্বারা উত্থিত উদ্যানটিকে বলা হয়-টেরেরিয়াম বাগান। যা এক ধরনের অন্দর উদ্যান অর্থাৎ বাড়ির ভেতরে উত্থিত বাগান। ডেভিড এখন 80 বছর বয়সী এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এই আবিষ্কারটি তারপরে তার সন্তানদের কাছে তিনি পৌঁছে দেবেন।।




