




আপনি যদি আধুনিক জুতো, চপ্পল পছন্দ করেন তবে অবশ্যই বিখ্যাত জুতার কোম্পানি বাটার নাম শুনেছেন। বাটা কে ভারতের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গুলির মধ্যে গণ্য করা হয়। যার পণ্যগুলি কিনতে লোকেরা বেশি পছন্দও করত। বাটার জুতো, চপ্পল আরামদায়ক এবং কম ব্যয়বহুলও এটা প্রমাণিত। তবে আপনি কি জানেন যে, ভারতের বিখ্যাত বাটা সংস্থার প্রথম দিকের ব্যবসাটি বাজারে মোটেও চলতে পারছিলনা।





তারপর এমন কি হলো যে, এই বাটা সংস্থা ভারতীয়দের সর্বাধিক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হয়ে উঠলো। অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে, এই বাটা একটি ভারতের ব্রান্ড, তবে আপনি এটি জেনে অবাক হবেন যে এটি একটি বিদেশি ব্রান্ড। হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়েছেন। এই সংস্থাটিকে 126 বছর আগে 1894 সালের 24 আগস্ট চেকোস্লোভাকিয়ায় স্থাপন করা হয়েছিল। এই ব্র্যান্ডটি যে ব্যক্তি শুরু করেছিলেন তার নাম হলো “থমাস বাটা” যিনি এই কোম্পানিকে তার পদবীর নাম দিয়ে রেখেছিলেন।





টমাস বাটা চেকোস্লোভাকিয়ার একটি ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন, যিনি শৈশব থেকেই খুব দারিদ্রতা এবং আর্থিক অনটনের মধ্যে বড় হয়েছিলেন। টমাসের পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে তাদের প্রজন্মজাত কাজ জুতা তৈরি করত। তাকে শৈশব কাল থেকেই ছোট ছোট জিনিস গুলোর জন্য লড়াই করতে হয়েছিল। তাই জুতো তৈরি করে অর্থ উপার্জনের সময় তিনি পরিবারের ব্যবসাটিকে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর জন্য তিনি নিজেই গ্রামে দুটি কক্ষ ভাড়া নেন।





তিনি এবং তাঁর ভাইবোনেরা মিলে তাদের মাকে এই সংস্থাটি শুরু করার জন্য রাজি করিয়েছিলেন। তারপরে তার মা তাদের জন্য জুতো সেলাই এর দুটি মেশিন 320 ডলারে কিনে দিয়েছিলেন। কিছু সময়ের জন্য কাজ করার পরই তার ভাই-বোনেরা এই ব্যবসা ছেড়ে দেয়। আসলে এই সংস্থা শুরুতে খুব বেশি আয় করতে সক্ষম হয়নি, যার কারণে তার ভাই-বোনেরা ব্যবসায় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করেছিল।





কিন্তু তিনি তার সাহস হারাননি এবং নিজের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। কোনমতেই হাল ছাড়েননি এবং ক্রমাগত জুতো তৈরি করে গেছে। তাঁর এই কঠোর পরিশ্রমের জন্যই বাটা সংস্থা আজ মানুষের এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সেই সময় বাজারে মন্দার কারণে তার ব্র্যান্ডের জুতো খুবই কম বিক্রি হয়েছিল। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে জনগণের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো অর্থই তার কাছে অবশিষ্ট ছিল না।





এই অর্থের অভাবে তাকে তার বাটা ব্র্যান্ড ছেড়ে নিউ ইংল্যান্ডের একটি জুতোর সংস্থায় তিনজন কর্মচারীর সাথে কাজ করতে বাধ্য হতে হয়েছিল। এরপর তিনি আবারও তার বাটা সংস্থাটিকে নতুন উপায়ে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তাঁর জুতার বাজার ঝুঁকি নিতে আবারও প্রস্তুত ছিলেন। তার সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি খুব শীঘ্রই তার বাটা সংস্থার সাথে জুতো বাজারে আবার ফিরে এলো। 1912 সালে এই বাটা কোম্পানি প্রায় 600 জন শ্রমিককে নিয়োগ করে।





এই সংস্থাটি তখনকার সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক নিযুক্ত করেছিল। তিনি জুতো বিক্রির সাথে সাথে সমানভাবে জুতো উৎপাদন বাড়ানোর কাজও শুরু করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাটা জুতোর দাম অর্ধেক করে ফেলেছিল, যার কারণে তাদের এই জুতোগুলির চাহিদা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছিল। বাটা সংস্থা এত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে তিনি তার ব্যবসা অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবলেন।





1912 থেকে 1924 সালের মধ্যে ব্যবসা প্রায় অনেকাংশেই প্রসারিত হয়েছিল। তিনি তার ব্যবসা ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মোজা, টায়ার, কেমিক্যাল এবং রাবারের মতো জিনিসও উৎপাদন করা শুরু করে অর্থাৎ এই সংস্থাটি আর শুধু জুতো উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাটার জুতো এবং পণ্যগুলি চাহিদা বিশ্বজুড়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, যার কারনে এই বাটা নামটি বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।





আসলে তিনি রবার এবং চামড়ার সন্ধানে ভারতে এসেছিলেন। এবং এখানকার লোকেদেরকে তিনি জুতা ছাড়াই হাঁটতে দেখেছিলেন। এই বিষয়টি দেখেই তিনি তার ব্যবসা ভারতে সমপ্রসারণের জন্য কাজ শুরু করেন। এরপর 1933 সালে তিনি কলকাতার সংলগ্ন কোনার নামক একটি ছোট্ট গ্রামে তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন এবং ভারতে প্রথম জুতোর সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিতও হয়েছিল।





এরপরে দিন দিন তার জুতার চাহিদা বাড়তে থাকে এবং এই সংস্থাটি দ্বিগুণ জুতো উৎপাদনকরা শুরু করে। আর তখন এই সংস্থাটিতে প্রায় 16 হাজার 560 জন কর্মী কাজ করতেন এবং তাদের মোট স্টোর সংখ্যা ছিল 1645 টি। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র এবং ভাই বাটা সংস্থাটিকে ডুবতে দেননি বরং তাকে আরো নতুন একটি স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কোন্নার সেই জায়গাটি এখন বাটানগর নামে পরিচিত।





সেই সময় এই সংস্থাটি প্রতি সপ্তাহে প্রায় 3500 জোড়া জুতা বিক্রি করত। বাটাই ছিল বিশ্বের প্রথম জুতার ব্যান্ড যেখানে টেনিসের জুতাও ডিজাইন ও বিক্রয় করা হতো। বর্তমানে ভারতে বাটার প্রায় 1375 টি খুচরো সেন্টার রয়েছে। এই ব্র্যান্ডের স্টোর গুলি দৈনিক 1 মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে। অনুমান করা হয় যে, বাটা এখন অনেক লোকেরই প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে।।




