




ছোট পরিবার সুখী পরিবার, এই কথাটি হয়তো আপনি অনেকবার শুনেছে বা পড়েছেন। যেটা আজকের সময়ে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। প্রত্যেকেই এখন একটি ছোট পরিবার রাখতে চায়, যাতে বাচ্চারা ভালোভাবে শিক্ষিত হতে পারে এবং তাদের ভালোভাবে মানুষ করা যায়। আজকের আধুনিক যুগে পরিবারগুলো যেমন ছোটো হচ্ছে, তেমনি সম্পর্কের গুরুত্বও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।





এই সময়ে ভারতের এক গ্রামে চার ভাইয়ের মিলিত পরিবার যৌথ পরিবারের উদাহরণ হিসেবে সত্যিই প্রশংসনীয়। এই পরিবারের মোট 39 জন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে ভীষণ গভীর ভালোবাসা এবং ঐক্য রয়েছে। আজকের যুগে যেখানে যৌথ পরিবারগুলি দাদু-দিদা, স্বামী স্ত্রী, এবং বাচ্চাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আবার অন্যদিকে একক পরিবারে কেবলমাত্র স্বামী স্ত্রী এবং তার সন্তানেরা একসাথে বসবাস করে।





এইরকম পরিস্থিতিতে, চিত্তোরে বসবাসরত সিকলিগার পরিবার হলো এমন একটি যৌথ পরিবার যেখানে, কেবল দাদু-দিদাই নয়, পরিবারের 39 জন সদস্য একসাথে বাস করেন। এই পরিবারে চারভাই রয়েছেন, যারা বিয়ের পরে এবং সন্তান জন্মানোর পরেও একক পরিবার হিসেবেই রয়েছেন আলাদা হওয়ার কথা ভাবেনওনি। বরং, এই সমস্ত ভাই তাদের পিতা-মাতার সাথে থাকার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।





যার ফলে, এই পরিবারে সদস্য সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। সাধারণত এটি বিশ্বাস করা হয় যে, সন্তানদের এক হয়ে থাকার একমাত্র কারন হলো তাদের বাবা-মা যাদের, মৃত্যুর পরে সন্তানেরা আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এই পরিবারের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা এতটাই ছিল যে, পিতা দেবী লাল ও মাতা জড়াব বাই এর মৃত্যুর পরেও ভাইয়েরা একে অপরকে ছেড়ে না দিয়ে যৌথভাবে থাকার সিদ্ধান্তই নেন।





এই পরিবারের দুই ভাই, ভগবান লাল ও গোপাল লাল মারা যাওয়ার পরেও, বাকি দুই ভাই লালচাঁদ ও সত্যনারায়ন একই সূত্রে বেঁধেছিলেন। এর পাশাপাশি লালচাঁদ ও সত্যনারায়ন তাদের প্রয়াত দুই ভাইদের স্ত্রী ও সন্তানদের দেখভালের দায়িত্বও নেন। চার ভাইয়ের এই প্রথম প্রজন্মের পরে, এই পরিবারে দ্বিতীয় প্রজন্মের মধ্যে 8 ভাই এবং 15 টি বোন রয়েছে, তাদের সবার ভাই বোনেদেরই বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পরে আট ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানেরা সবাই একই ছাদের নিচে বাস করতেন।





এই পরিবার চিত্তোরের সদর বাজার এলাকায় বসবাস করে, যেখানে প্রত্যেকে তাদের যৌথ পরিবার ও ভালবাসার প্রশংসা করে। মাতা জড়াব বাই সর্বদাই চেয়েছিলেন, যে তার ছেলেরা যেন সবসময় একসাথে থাকে এবং তাদের পরিবারকে একসাথে লালন পালন করে। মায়ের এই মূলমন্ত্রকে মেনে নিয়েই চার ছেলে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এরপরে তারাও তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি যৌথ পরিবার হিসেবে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।





এই পরিবার বংশপরম্পরায় পিতা-মাতার আচারের কারণেই কখনো টুকরো টুকরো হয়ে যায়নি বা কখনো আলাদা হওয়ার কথা ভাবেওনি। জড়াব বাই তার সন্তানদের শিখিয়েছিলেন যে, পরিবার যদি একসাথে থাকে তবে যেকোন সমস্যার মুখোমুখি তারা হতে পারবে এবং পরিবারের উন্নতি করতে পারবে। এগুলি ছাড়াও এই পরিবারের চার প্রজন্মের খাবার একই রান্নাঘরে তৈরি করা হয়, যেখানে পরিবারের সমস্ত সদস্যরা একসাথে বসে খেয়ে থাকেন।





রান্নাঘর, ঘর পরিষ্কার ও অন্যান্য কাজগুলি বাড়ির সমস্ত মহিলারা পরস্পরের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। এমনকি এই পরিবারের বড়দের মধ্যে কখনো লড়াইও হয়নি। এই ভাইদের মধ্যে সবসময়ই খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, যার কারণে তাদের মধ্যে কোন মতবিরোধ হত না। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের চিন্তাভাবনাকে সমান মর্যাদা দিত এবং তারা তাদের সন্তানকে সবাই একই স্কুলে ভর্তি করাতেন। আর এই পরিবারে কোনো সিদ্ধান্ত কারো উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হতো না, যার কারণে পরিবারের প্রতিটি সদস্যই সন্তুষ্ট থাকত।।




