




প্রত্যেকটি সফল ব্যক্তিরই একটি দীর্ঘ সংগ্রাম এবং নিরলস শ্রমের গল্প রয়েছে। আজ যারা সাফল্যের সিংহাসনে বসে আছে, তারাও কখনও না কখনও খুব ছোট স্তর থেকে তাদের জীবনের যাত্রা শুরু করেছিল এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য। আজ আমরা আপনাদেরকে এমনই একজন সফল ব্যক্তির গল্প বলতে যাচ্ছি, যিনি কলকাতায় একটি ছোট্ট মুদির দোকানে তার বাবার সাথে শৈশব থেকেই কাজ করা শুরু করেছিলেন।





তবে আজ তিনি ভারতের বৃহত্তম খাবারের ব্র্যান্ড প্রিয়া ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা। স্পষ্টতই, তিনি এই পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অনেক লড়াই করেছিলেন। এখানে আমরা যার কথা বলছি তিনি হলেন গণেশ প্রসাদ আগারওয়াল। তার কঠোর পরিশ্রমের জন্যই এই ‘প্রিয়া ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড’ সংস্থাটি মাত্র তিন দশকের মধ্যে বিকশিত হয়েছিল এবং পূর্ব ভারতের বৃহত্তম ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।





বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় 100 কোটি টাকা। তার এই সংস্থাটিতে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট এবং বিভিন্ন প্রকারের স্ন্যাকস তৈরি করা হতো, যা পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশার বাজারে পাওয়া যেত। কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন গণেশ প্রসাদ আগারওয়াল। তার বাবা সামান্য মুদির দোকান চালাতেন।





তাদের বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিলনা তাই তার বাবা সবসময় চাইতেন, তার সন্তান যেন ভালো করে পড়াশোনা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, যাতে তাদের এই ছোট কাজটি করতে না হয়। তিনি মুদির দোকানে বাবার সাথে কাজ করার সাথে সাথে কিছু শিশুদের কে নিয়ে টিউশন পড়ানোও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার বাবা চেয়েছিলেন সে যেন তার পড়াশোনার দিকেই মনোনিবেশ করে।





তারপরে তিনি উত্তর কলকাতার সিটি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। স্নাতক শেষ করার পরে তিনি তার বাবার সাথে দোকানে বসে পড়েছিলেন। কারণ তার পরিবারে মোট 7 জন লোক ছিল, তার বাবার একার আয়ে তাদেরকে চালানো আর সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর থেকে তিনি প্রায় 14 বছর এই দোকানেই কাজ চালিয়ে যান। তারপরে একদিন তার মনে আসে নিজের একটা আলাদা ব্যবসা শুরু করার কথা।





তবে সে কি ব্যবসা শুরু করবে তা নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়ে ছিল। এত বছর ধরে মুদির দোকানে কাজ করার সময় সে দেখেছিল যে, অন্যান্য আইটেমগুলোর মধ্যে মন্দা দেখা দিলেও খাবারের আইটেমগুলিতে কখনো মন্দা দেখা দিত না। তারপরে গণেশ 1986 সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি একটি বিস্কুট তৈরির কারখানা তৈরি করবেন।





তারপরে তিনি ব্যবসার মূলধন এর জন্য সম্পত্তির ভাগ, বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ, পাশাপাশি ব্যাংক থেকে লোনও নিয়েছিলেন। এইভাবে, তিনি প্রায় 25 লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এরপরে গণেশ 50 জন কারিগর নিয়ে বিস্কুট তৈরির কাজ শুরু করলেন। এরপরেই একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড, প্রিয়া বিস্কুট কোম্পানি, ভারতে জন্মগ্রহণ করেছিল।





তিনি যখন এই সংস্থাটি শুরু করেছিলেন তখন বাজারে প্রচুর প্রতিযোগিতা ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, তিনি তার প্রিয়া বিস্কুট সংস্থাটিকে বিখ্যাত করার জন্য 5 জনের একটি দল গঠন করলেন যারা ঘরে ঘরে গিয়ে এই সংস্থার পণ্য সম্পর্কে লোকেদের অবহিত করবে। প্রথমে এই সংস্থায় গ্লুকোজ এবং নারকেল বিস্কুট তৈরি করা হতো। তিনি খুব কম দামে ভালো মানের বিস্কুট সরবরাহ করতেন যা ছিল তার ব্যবসার কৌশল।





এতে তিনি সাফল্যও পেয়েছিলেন এবং প্রিয়া বিস্কুট কোম্পানি বিখ্যাতও হয়ে উঠেছিল। তারপরে এই সংস্থা বিস্কুট ছাড়াও আরও অন্যান্য পণ্যও তৈরি করেছিল। এখন গণেশ আগারওয়ালের কারখানা শত শত কারিগর কাজ করেন। তবে প্রথমদিকে তাদের নিজেদেরকেই খুব কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল। সেই সময়টা তার পক্ষে খুবই কঠিন ছিল।





সেই সময় তাঁর সকাল সাতটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত কাজ চলত। 2005 সালে তাঁর এই বিস্কুটের ব্যবসা খ্যাতি অর্জন করে। বর্তমানে তার দুই পুত্রই এই সংস্থার পরিচালক। তিনি যেই কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তার ফলস্বরূপ এই সাফল্য পেয়েছিলেন। তার এই সাফল্য আজকের যুব সমাজকে এই শিক্ষাই দেয় যে, জীবনের লক্ষ্যকে একমাত্র সত্যনিষ্ঠা ও সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জন করা যায়।।




